আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশের অধিকাংশ যুবক, যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করেছে তাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি একটি স্পৃহা থাকে, লক্ষ্য থাকে। যে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে, সেজন্য তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাঠে কি কি হয় সেটি না জেনে অ্যাপ্লিকেশনও করে। কিন্তু শারীরিক যোগ্যতা, অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস, সিলেকশন প্রসেস এবং কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না সেসব সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা না থাকার কারণে তারা বাতিল হয়ে যায়। এভাবে ১ বার ২ বার এবং একটা সময়ে গিয়ে তারা মানসিকভাবে ডিপ্রেশনে চলে যায়। প্রেসার পড়ে যায় এবং আর্থিকভাবে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে। সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে কি কি কাগজ লাগে।
সেনাবাহিনীতে যোগদান করার জন্য ৩ টি বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয় :
- ১ . শারীরিক যোগ্যতা
- ২ . সিলেকশন প্রক্রিয়া বা বাছাইকরণ পদ্ধতি এবং
- ৩ . রিজেকশন বা বাতিলের কারণ
সেনাবাহিনীর মাঠে কি কি হয়
শারীরিক যোগ্যতা
সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য একজন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে প্রথমেই যেটা দরকার সেটা হচ্ছে আউটলুক বা ফিটনেস। আউটলুক ফিটনেস : এখন আউটলুক বলতে কিন্তু সেটা বুঝাচ্ছে না যে আপনি কতটুক সুন্দর বা কালো, এখানে বুঝানো হচ্ছে আপনি কতটুকু ফিট।
তো এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, কিভাবে বুঝব সেনাবাহিনীতে জন্য যোগদানের জন্য আমি ফিট আছি কিনা?
উওর : আপনার উচ্চতা যদি নুন্যতম ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি হয়। ওজন যদি ৫০ কিংবা তার বেশি হয় এবং বুকের মাপ ৩০ এবং ৩২ হয় আর আপনার জানা মতে যদি আপনার শরীরের ব্লাড রিলেটেড বা বড় কোনো রোগ কিংবা সমস্যা না থাকে, তাহলে সেনাবাহিনীতে অ্যাপ্লিকেশনের জন্য নূন্যতম যে ফিটনেস সেটা আপনার হয়েছে এটা নিশ্চিত। তখন ধরুন আপনি সেনাবাহিনীতে সঠিকভাবে অ্যাপ্লিকেশন করলেন। সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে কি কি কাগজ লাগে
সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে কি কি কাগজ লাগে
আপনি যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে চান কিন্তু আবেদন কি কি কাগজ লাগে এটা যদি না জানেন, তাহলে আমাদের এই আর্টিকেল টি পড়তে পারেন। – সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে কি কি কাগজ লাগে
সিলেকশন প্রক্রিয়া
অ্যাপ্লিকেশনের পর সিলেকশন ডেটের ৭২ ঘন্টা আগে কেন্দ্রের নাম সহ একটি এসএমএস আপনার ফোনে চলে আসবে। সেই এসএমএস অনুযায়ী আপনি গন্তব্যে পৌঁছাবেন এবং যেটা লক্ষণীয় বিষয় সেটা হচ্ছে : এসএমএস অথবা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত সঠিক সময়ের মধ্যেই সেখানে আপনাকে উপস্থিত হতে হবে। তো ধরুন উপস্থিত হলে হলেন। তখন আপনার সাথে থাকবে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কলম এবং যে ফোনে এসএমএস গিয়েছিল সেই ফোনটি সহ রুমে ডুকবেন।
তো রুমে যাওয়ার পরে ওখানকার কিছু নিয়ম রয়েছে, যেমন : কিছু কাগজ আপনাকে সিগনেচার দিতে হবে এবং আপনার ফোনটা সাইলেন্ট করে জমা দিতে হবে এবং একটা কথা আপনাদের কে জানিয়ে রাখি, আপনার ফোনে যদি কোন প্রকার নুড পায় কিংবা আপনি যদি চাকরির জন্য কারো কাছে কোনো টাকা দিয়ে থাকেন বা আর্থিক লেনদেন করে থাকেন এগুলো আপনি করে থাকেন আর তারা জানতে পারে তাহলে আপনাকে অবশ্যই বাতিল করে দিবে পাশাপাশি আপনার শাস্তিও হতে পারে।
আরও পড়তে পারেন : রকেট একাউন্ট চেক করার কোড – Rocket account check
প্রাথমিক মেডিকেল
প্রাথমিক মেডিকেলে আপনাদের গায়ে গেন্জি এবং হাফ প্যান্ট ছাড়া অন্য সব কিছু খুলে ফেলতে হবে এবং প্রাথমিক মেডিকেলের জন্য আপনাদেরকে অন্য একটি রুমে ঢাকা হবে। প্রাথমিক মেডিকেলে আপনার বাহ্যিক রূপ দেখা হবে। যেমন : আপনার হাইট দেখা হবে, ওজন দেখা হবে, বুকের মাপ দেখা হবে, আপনি ধূমপান করেন কিনা সেটা চেক করা হবে, হাত ছোট-বড় আছে কিনা সেটা দেখা হবে, চোখ দেখা হবে, মাথা থেকে পা পযর্ন্ত সব কিছু দেখা হবে।
শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা
শারীরিক দিক দিয়ে আপনি কতটুকু সক্ষম সেটা তখন পরীক্ষা করা হবে। শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা করা হয় কয়েকটি ধাপে যেমন : দৌড়, বুকডাউন, সাতার এবং এছাড়া আরও কিছু করে আপনার শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা করতে পারে।সেনাবাহিনীর শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা উপরেও মার্কস রয়েছে। এটিতে আপনি যত ভালো করবেন তত বেশি নাম্বার পাবেন।
চূড়ান্ত মেডিকেল
এই ধাপে আপনার পরনে কোনো জামা কাপড় থাকবে না। সেখানে আপনার অণ্ডকোষসহ, পায়ুপথের কোন সমস্যা আছে কিনা সবকিছু দেখা হবে।
লিখিত পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষা হবে : বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ জ্ঞান এবং হালকা গণিত নিয়ে। লিখিত পরীক্ষায় এমন কোন প্রশ্ন থাকবে না, যেটা এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাশ করা একজন ছাত্র পারবে না। সেখানে সহজ প্রশ্নই করা হয় কিন্তু একজন ক্যান্ডিডেট যেখন এতোগুলো ধাপ পার করে আসে তখন সে চিন্তায় পড়ে যায় যে, এতোগুলো ধাপ পার করে আসলাম এখন কি প্রশ্ন আসবে। এরকম চিন্তা ভাবনা নিয়ে পরিক্ষা দেয়ার কারণে জানা প্রশ্নের উওরও ভালো হয় না। তাই এই সেক্টরে অনেক ভালো ক্যান্ডিডেট বাদ পড়ে যায়। তবে আমি পরসোনালভাবে টিপস দেই যে, যখন আপনি সব ধাপ পার করে এখানে আসবেন তখন আপনার মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত থাকবেন এবং নিজের বেস্ট টা দেয়ার চেস্টা করবেন। তাহলে এই সেক্টর থেকে আপনি বাদ পড়বেন না।
কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না
যদি এগুলো জানতে পারি তাহলে অবশ্যই আমাদের প্রস্তুতির আরেকটু ভালো হবে।
শরীলে কাটা দাগ
শরীলে যদি কোন কাটা দাগ থাকে। যেমন : এক থেকে দেড় ইঞ্চি কিংবা তার চেয়ে বেশি।
শরীলে নাম লেখা
আপনার হাতে বা শরীলে কোন স্থানে যদি কারো নাম বা কোন অক্ষর লেখা থাকে তাহলেও আপনি বাদ পড়ে যাবেন।
টেটু করা
আপনার শরীলে যদি টেটু করা থাকে তাহলে আপনি বাদ পড়ে যাবেন।
নখের সমস্যা
অনেকের নখের সমস্যা থাকে, নখের কোণায় পচন থাকে। এরকম যদি সমস্যা আপনার থাকে তাহলে বাদ পড়ে যাবেন।
নাকের সমস্যা
নাকের সমস্যাও আপনি বাদ পড়বেন। অনেকের এক নাক বন্ধ এবং অন্য নাক খোলা থাকে এরকম কিছু হলেও আপনি বাদ পড়বেন।
দাঁতে সমস্যা
আপনার দাঁতে যদি সমস্যা থাকে তাহলেও আপনি বাদ পড়ে যেতে পারেন। এই আর্টিকেলে দাঁত নিয়ে বিস্তারিত বললে আর্টিকেলটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই দাঁতে কি কি সমস্যায় বাদ দেয়া হয় সেটি নিয়ে আমি অন্য একটি আর্টিকেল তৈরি করেছি। আপনারা চাইলে সেটি পড়ে আসতে পারেন। – দাঁতে কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনী থেকে বাদ দেয়া হয়
চোখের সমস্যা
কেউ যদি দূরের জিনিস ভালো দেখতে পারে এবং কাছের টা দেখতে পারে না অথবা যদি কাছের টা দেখতে পারে দূরের টা দেখতে পারে না। এরকম থাকলেনও বাদ পড়ে যাবেন।
কালার ব্লান্ড
লাল এবং সবুজ বর্ণের মধ্যে যদি পার্থক্য করতে না পারেন তাহলে আপনি বাদ পড়ে যাবেন। তো আমি পার্সোনালি আপনাদেরকে সাজেস্ট করব : অবশ্যই আপনারা আগের রাতে ভালোভাবে ঘুমিয়ে নিবেন এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে এক রাত আগেই ওখানে পৌঁছে যাবেন। তাহলে ফিজিক্যালি, মেন্টালিস্ট সব ভাবে আপনি ভালো ভাবে ফ্রেস হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবে।
হাটু গেলে যাওয়া
আপনি যদি আকৃতিতে দাড়ান এবং যদি আপনার দুই হাটুর মাঝখানে ১ ইন্চি জায়গাও ফাক না থাকে তাহলে আপনি বাদ পড়ে যাবেন। এটাও এক ধরনের শারীরিক সমস্যা।
অতিরিক্ত ধূমপান
যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন তারাও ওখান থেকে বাদ পড়ে যাবেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমি কি কি পরিমান ধুমপান করি সেটা তারা কিভাবে বুঝবে? এর উওর হলো : যারা ধুমপান করে না তাদের বুকের মাপ যদি হয় ৩০ তাহলে প্রসারিত অবস্থায় হবে ন্যূনতম ৩২ । কিন্তু যারা রেগুলার ধূমপান করে তাদের ক্ষেত্রে ২ ইঞ্চি বাড়বে না।
ভার্জিন না হওয়া
অনেকের দেখা যায় অবিবাহিত কিন্তু ভার্জিন নয়। এসব কারণেও বাদ পড়ে যাবেন। এর পাশাপাশি আপনার গোপনাঙ্গ যদি বড় কোন সমস্যা থাকে। যেমন : অণ্ডকোষ ছোট বা বড় হলে, অতিরক্ত হস্তমৈথূন করলে ইত্যাদি। এইসব কারণে অবশ্যই আপনি বাতিল হয়ে যাবেন।
মাথায় টাক
আপনার মাথায় টাক পড়া থাকে তাহলেও আপনি বাদ পড়ে যাবেন।
অতিরিক্ত তোতলা
আপনি কথায় কথায় যদি আটকে যান বা তোতলান তাহলেও আপনি বাদ পড়ে যাবেন।
আই কন্টাক্ট না পারা
অনেকে রয়েছে, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। এটাও একভাবে অটিজম বলা যায়। এসব সমস্যার কারণে কিন্তু বাদ দিয়ে দেয়া হয়।
তো যোগদান প্রক্রিয়া এবং কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না এইগুলো আলোচনার পর আমরা বুঝলাম যে, সেনাবাহিনীতে বাতিল হওয়ার জন্য অনেক কারণ রয়েছে। যেকোনো কারণে আপনি বাতিল হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু টিকে থাকার কারণ হচ্ছে : মাত্র ২ টি ।
১ . আপনাকে ফিট এবং সুস্থ থাকতে হবে,
২ . আপনাকে পজিটিভ মাইন্ডে একজন মানুষ হতে হবে। সুস্থ মস্তিস্কের একজন মানুষ হতে হবে। এই ২ টা কারণ যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে নিশ্চিত আপনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে পারবেন।
আরও পড়ুন : এই তথ্যগুলো ছাড়াও সেনাবাহিনী থেকে আর কিছু কারণে বাদ দেয়া হয়, সেগুলো জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। – সেনাবাহিনীর মাঠ থেকে বাদ পড়ার ১০ টি কারণ
তো আপনাদের আমি সেনাবাহিনীতে যোগদান করার সকল তথ্য তুলে ধরেছি। কিভাবে যোগাদান করবেন এবং কি কি কারণে বাতিল হবেন ২ টাই তুলে ধরেছি। আশা করছি আপনাদের এই সেনাবাহিনীর মাঠে কি কি হয় এবং কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না, সেনাবাহিনীতে আবেদন করতে কি কি কাগজ লাগে – আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। যেকোন সমস্যায় আমার সাথে কন্টাক করুন।
1 thought on “কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না | মাঠে কি কি হয়”